Onlyfan Premium Videos

অমাবস্যার চাঁদ -৮



 

গল্প:অমাবস্যার চাঁদ 

পর্ব:-৮

লেখক:-আরভান শান আরাফ


সকাল খুব ভোরে মাকে স্বপ্ন দেখলাম৷ মায়ের চেহারাটা ঠিক স্বপ্নে পরিষ্কার ছিল না কিন্তু স্বপ্নে যাকে দেখেছি তিনি আমার মা ই ছিলেন৷ মা পায়ে আলতা দিতে দিতে আমাকে কী যেন বলছিলেন। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরে ও স্বপ্নের রেশ টিকে থাকলো বহুক্ষণ। আমি ফ্রেশ হতে হতে দেরি হয়ে গেল৷ নাস্তা না করে ই গাড়ি বের করে হাসপাতালের দিকে ছুটলাম৷ 

মন অস্থির হয়ে ছিল৷ নিলয় সারাদিন একবার ও ম্যাসেজ করেনি। বেলা দুইটার দিকে হুট করে ই রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেল৷ আমি তাড়াহুড়ো করছিলাম যেন বিকেলের আগে আগে হাসপাতাল ছাড়তে পারি৷ কিন্তু যে অবস্থা দেখা দিয়েছে খুব দ্রুত ছাড়া পাব বলে মনে হচ্ছে না। হয়তো রাত হয়ে যাবে।আমি নিলয়কে ম্যাসেজ করলাম। তার রিপ্লে আসেনি। আমার মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেল৷ মনে হলো নিলয় আমাকে চাচ্ছে না৷ ভালোবাসে না আমাকে। আমার হৃদয়ে ওর জন্য যেমন ভয়াল প্রেম ওর হৃদয়ে নেই৷ 

সব রোগী দেখে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা৷ বাসায় ঢুকেই দেখি নিলয় সোফাতে বসে খেলা দেখছে৷ আমার মনের বিষণ্ণতা নিমিষে দূর হয়ে গেল৷ আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম৷ ও আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল

-দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে যান৷ আমাদের যেতে হবে। 

আমি মুখ ভার করে বললাম

-সারাদিন এত  ম্যাসেজ করলাম রিপ্লে করুনি কেন?

নিলয় ওর প্যাকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার হাতে দিল। ফোনটা ভাঙ্গা। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম

-ফোন ভাঙলে কী করে?

-গতরারতে সালাম মিয়া এসেছিল মাতাল হয়ে৷ কী সব কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করতে বলল৷ করিনি,তাই ফোন ভেঙ্গে চলে গেল। 

আমি ওর দিকে তাকালাম৷ ওকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে৷ আমি জড়িয়ে ধরে, ওর মাথাটা আমার বুকে চেপে ধরে কপালে চুমু খেলাম৷ নিলয় হেসে উঠল৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম

-হাসো কেন?

-আপনি আমাকে বাচ্চা ভাবেন তাই৷ 

আমি আশাহত হলাম৷ ও ভাবে, আমার ওর প্রতি যে প্রেম৷ মোহ, ভালোবাসা সেটা স্বাভাবিক ছোটদের বড়রা যেমন স্নেহ করে তেমন৷ 

কী করব আমি? ওকে কী করে বুঝাব ওর প্রতি আমার যে আবেদন সেটা মানসিক,শারিরীক, আত্মিক এক প্রাচীন আবেদন। হয়তো সেই আবেদন সমাজ সিদ্ধ না কিন্তু আবেদন নিছক মিছে না। 

আমি ওর হাতটা আমার বুকে রেখে বললাম

-কখনো কাউকে ভালোবেসেছ?

নিলয় হ্যা-বোধক মাথা নাড়লো৷ 

-কাকে?

-পরে বলব। 

নিলয় আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার গালে চুমু খেয়ে বলল

-যান,রেডি হোন।

 আমি খুশিতে গলে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে যাব ঠিক সেই সময় জমির কাকা ঢুকে সব আশায় জল দিয়ে বোকার মত প্রশ্ন করল

-নিলয় বাজি কেমন আছ গো? 

নিলয় মুচকি হেসে বলল

-কাকা,চা খাওয়ান না। 

জমির কাকা চা আনতে চলে গেল। আমি ফ্রেশ হতে উঠে দাঁড়াব ঠিক তখন নিলয় আমার হাত টেনে ধরল৷ আমি ওর দিকে তাকাতেই সে বলল

-কী যেন বলছিলেন। 

- বের হয়ে বলব। 

সে দিন রাতটা আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা রাত৷ সেদিন সেই রাতে আমি নিলয়কে পেয়েছিলাম আমার সবচেয়ে কাছে। 


আমি আজ পাঞ্জাবী পড়েছি৷ নিলয় একবার বলেছিল পাঞ্জাবিতে আমাকে ভালো লাগে।রেডি হয়ে মিনিট পাঁচেক নিচে সোফাতে বসে ছিলাম। নিলয় আসলো টি শার্ট আর ক্যাপ পড়ে৷ আমাকে দেখে অপলকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল

-আপনাকে তো অপূর্ব লাগছে ডাক্তার সাব৷ 

আমি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম

-আমরা,কোথায় যাচ্ছি তাহলে?

-চলুন আমার সাথে৷ 

-গাড়ি বের করবো? 

-নাহ!আজ আমরা রিকশায় যাব৷ 

আমরা মন্দিরপাড়া রোড হতে রিকশায় উঠলাম৷রিকশা কোথায় যাচ্ছে,কেন যাচ্ছে আমি জানি না৷ শুধু জানি যে মানুষটাকে আমি ভালোবাসি সে আমার পাশে। আমার শরীর ঘেঁষে বসে আছে৷ এর চেয়ে অধিক জীবনে কিছুই চাইনি৷ রিকশা থামলো নদীরপাড়৷ বর্ষায় নদী কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে৷ আমি আকাশের দিকে তাকালাম৷ আজ পূর্ণিমা৷চাঁদের আলো নদীর জলে পড়ে অদ্ভুত সৌন্দর্যতা সৃষ্টি করেছে। আমি নিলয়কে এবার প্রশ্ন করলাম

-আমরা কোথায় যাচ্ছি?

নিলয় আমার হাত ধরে বলল

-ভয় নেই ডাক্তার সাব৷ আমরা নৌকায় চড়ে জোসনা বিলাস করতে এসেছি৷ 

-জোসনা বিলাস৷ সেটা আবার কী?

নদীতে একটা খেয়া নৌকা ছিল৷ সে সেটাতে লাফ দিয়ে উঠে আমাকে টেনে তুলল৷ নৌকাতে একটা মাদুর বিছানো৷ আমি মাদুরে বসলাম৷ নিলয় বৈঠা বেয়ে নৌকাটাকে নদীর মাঝখানে নিয়ে গেল৷ দিনের আলোর মত চাঁদের শীতল আলো আমাদের শরীরে মিশে যাচ্ছে৷ আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম। চাঁদের আলোয় ওকে দেখাচ্ছে অদ্ভুত সুন্দর। নিলয় আমার মনে আদিম এক বাসনা জেগে উঠলো৷ ইচ্ছে করছিল ওকে বলে দেই আমার হৃদয়ের গুপ্ত বাসনার কথা৷ নিলয় কথা বলল

-সন্ধ্যায় কী জানতে চেয়েছিলেন মনে আছে?

-হ্যা। তুমি বলেছিলে বলবে। 

-বলব,কিন্তু বিশ্বাস করবেন তো?

-আগে শুনি তো৷ বিশ্বাস অবিশ্বাস পরের বিষয়৷ 

নিলয় বৈঠা রেখে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। এই প্রথম আমি ওর চোখের ভাষা পড়তে পারলাম৷ আমি উঠে দাঁড়ালাম৷ নিলয় এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলো৷ ওর এমন প্রেমময় স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম৷ নিলয় তার পায়ের পাতায় ভর দিয়ে নিজের উচ্চতা বাড়িয়ে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল

-আপনাকে ভালোবাসি৷ শুধু আপনাকেই। 

আমি এক মুহুর্তের জন্য কেমন যেন হয়ে গেলাম৷ মনে হলো আমি স্বপ্নে দেখছি৷ ঘুম ভাঙলেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। আমি নিলয়কে আমার বুকের সাথে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেয়ে বললাম

-আমি ধন্য নিলয়৷ আমি ধন্য। আমি যে তোমাকে কতটা চাই সেটা তুমি বুঝতে পেরেছ। তুমি আমার জীবনকে আলোয় আলোকিত করে দিয়েছ। 

আমার চোখ বেয়ে তখন জল গড়িয়ে পড়ছে। 

ভালোবাসি বলার চেয়ে 'ভালোবাসি' শোনার মাঝে এত সুখ তা আমার জানা ছিল না। 

নিলয় আমার জীবনে এত সুখ নিয়ে আসবে তা কল্পনার অতীত ছিল আমার জন্য। 


এর পরের দিন সকালে ঘুম থেকে জেগেই দেখি নিলয় নিচে বই নিয়ে বসে আছে। আমি বারান্দা থেকে ওকে দেখছিলাম।কী একটা মনোযোগ দিয়ে যেন পড়ছে। আমি নিচে নামলাম। আমাকে একবার দেখে আবার চোখ সরিয়ে নিল। 

-কী পড়া হচ্ছে শুনি?

-কাল টেস্ট আছে ক্লাসে। 

-বাহ!টিউশনির ক্লাসে?

-হ্যা। 

-কার কাছে টিউশন নিচ্ছ?

-স্যার নিলয় আহমেদের কাছে। 

বুঝলাম টিউশন নিচ্ছে না৷ জিজ্ঞেস করলাম

-এক্সট্রা টিউশন যাও না কেন?

-গত বছর নিয়েছিলাম৷ তিন বছর ধরে তো একি বই পড়ছি তাই সমস্যা হচ্ছে না। 

আমি সোফায় বসে ওর গালে চুমু খেলাম। নিলয় একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দিল। 

-নিলয়

-হু!

-নাস্তা করেছ? 

-নাহ

আমি খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে বাটিতে করে একটু হালুয়া এনে চামচে ভরে ওর মুখের সামনে ধরে বললাম

-খাও। 

নিলয় আগ্রহ ভরে হালুয়া মুখে দিয়ে বলল

-আপনি খান৷ এটা কাকী পাঠিয়েছে আপনার জন্য। 

আমি মুখে দিয়ে কাকীর মায়ায় পরে গেলাম। 


হসপিটাল থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি নামলো। তখন রাত নয়টা হবে। দু'দিন ধরে যে গরম ছিল, বৃষ্টি হওয়াতে গরমের উত্তাপ কিছুটা কমেছে৷ গাড়ি থেকে নামতেই দেখি নিলয় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে৷ আমাকে দেখে দৌড়ে আসলো। 

সেদিন রাতে কেন জানি আমার খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল৷ সারারাত্রি বৃষ্টি পড়ছিল।

 নিলয় আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে৷ ডিম লাইটের আলো এসে ওর চেহারায় পড়েছে। ওকে একটা শিশুর মত লাগছিল। আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ওর পিঠে হাত রাখলাম৷ ফর্সা পিঠে আঘাতের চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে৷ আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই আমার চোখ বেয়ে উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়ল৷ আমি নিলয়কে আর কষ্ট পেতে দিব না৷ যে কোন কিছুর মূল্যে ওকে রক্ষা করব।

বাহিরের টিপটিপ বৃষ্টি,আমার বুকে আমার রাজপুত্র। তার ভালোবাসায় আমি স্নিগ্ধ। আমার হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ তার প্রতি আবেগে।

নিলয় ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে কী যেন বলছে৷ আমি ওকে ডাকলাম

-এই নিলয়,এই। 

নিলয় আরো গুটিয়ে আমার শরীরের সাথে মিশে গেলো৷ আমি ওকে চুমু খেলাম৷ নিলয় কেঁপে উঠে আমার হাতের বাহু জড়িয়ে ধরলো। ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম৷ 

সকালে দেখি নিলয় নেই৷ আমি জমিরউদ্দীন কাকাকে জিজ্ঞেস করলাম নিলয়কে দেখেছে কিনা৷ কাকা বলল সে নাকি খুব ভোরে জেগে গেছে৷ 

আমি বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। আকাশ পরিষ্কার। হালকা রোদ উঠেছে। আমি বারান্দায় বসে কফির কাপে চুমুক দিতেই জমিরউদ্দিন কাকা এসে বলল

-বাজান,নিলয় বাজি আসছে৷ 

আমি কফি মগ নিয়ে নিচে নামলাম৷ নিলয় আমার হাতে একটা পদ্মফুলের কলি ধরিয়ে দিয়ে বলল

-এটা নিয়ে আসছি আপনার জন্য। 

আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম

-ফোন কোথায়?

সে সোফায় বসে টিভির রিমোট হাতে নিতে নিতে বলল।

-ফোন তো ভাঙ্গা৷ তবে কাকা বলেছেন কিনে দিবে৷ 

-কাকার কিনে দিতে হবে না৷ আজ সন্ধ্যায় আমি কিনে দিবে। 

-কেন আপনি কেন কিনে দিবেন?

-তোমার কাকা কেন কিনে দিবে?

নিলয় কোন উত্তর দিল না৷ টিভির দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে উঠে বলল

-আপনি তো খুব কথা জানেন ডাক্তার সাব। 

আমি ওর পাশে বসে বললাম

-কেন,ডাক্তারদের কথা জানতে নেই?

নিলয় ওর মাথাটা আমার কাঁদে দিয়ে বলল

-আপনি মোবাইল দিলে লোকে কী বলবে?

আমি ওর কপালে চুমু খেয়ে বললাম 

-লোকের কথা ভেবে কি পুরুষ হয়ে একজন বালককে ভালোবাসতাম?

নিলয় একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল

-সামনে কী হবে কে জানে। 

-চলো দূরে কোথাও চলে যাই৷ আমি,তুমি মিলে এক সাথে থাকলাম। একত্রে জীবন কাটাব৷ 

নিলয় কিছু না বলে টিভিতে খেলা দেখায় মনোযোগী হয়ে গেল। 


জীবন কেটে যাচ্ছে৷ এত সুখ এর পূর্বে কখনো পাইনি৷ সামনে নিলয়ের পরিক্ষা৷ সে একদম ই পড়াশোনা করছে না৷ আমার ইচ্ছে নিলয় ভালো একটা রেজাল্ট করুক৷ গত বছর হার্ট সার্জারীর জন্য পরিক্ষায় বসতে পারেনি। সেদিন বিকেলে চ্যাম্বারে বসে ছিলাম। রোগের ভিড় খুবটা ছিল না৷ নিলয় এক প্রকার দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

-ডাক্তার সাব,একশো টাকা দেন তো।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম

-একশো টাকা কেন?

-আহা! দেন না৷ কাজ আছে৷ 

আমি পকেট থেকে মানি ব্যাগটা বের করে ওর হাতে দিয়ে দিলাম৷ সে ব্যাগটা নিয়ে আবার দৌড়ে নিচে নেমে গেল৷ 

আমি একটু উঠে জানালার কাচ দিয়ে উঁকি দিলাম৷

সে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে একজন বৃদ্ধাকে দিচ্ছে৷ বয়সের ভারে সে কুজো হয়ে আছে৷ চেহারাটা দেখে কেমন যেন মায়া লেগে গেলো৷ নিলয় টাকাটা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে আবার উপরে উঠে আসলো। 

আমি গিয়ে চেয়ারে বসলাম। 

-দুশো টাকা নিয়েছি৷ মনে রাখবেন,শোধ করে দিব। 

-মনে রাখব৷ আজ সন্ধ্যায় অন্য কোথাও যেয়ো না৷ 

-কেন?

-বলেছি যেয়ো না৷ তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব৷ 

নিলয় পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল

-খিদা লেগেছে৷ 

-সে কি,এত বেলা হলো খাওনি?

-নাহ।

-কেন?খিদা নেই, নাকি অনীহা?

-আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি৷ 

-কেন?

নিলয় কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। অজানা এক ভয়ে আমার ভেতর নড়ে উঠলো৷ 

-কী হয়েছে নিলয়?

নিলয় কিছু বলেনি৷ আসছি বলে বের হয়ে গেল।

আমি বাসায় জমিরউদ্দীন কাকার কাছে ফোন করে বললাম, গ্রামে যেতে৷ নিলয়দের বাসায় কী ঝামেলা তা জেনে আসতে৷ 

বিকেলের দিকে  ইমার্জেন্সিতে  একজন পেসেন্ট আসায় ছোটাছুটিতে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।জমিরউদ্দীন কাকা ফোন দিল নিজ থেকে।আমি ফোনটা ধরে চ্যাম্বারে চলে আসলাম।

-জ্বি, কাকা৷ বলুন

-বাজান,নিলয়ের বাপ গত পরশু রাতে নিলয়কে খুব মারধোর করেছিল কাগজে সই করার জন্য৷ কিন্তু নিলয় বাজি সই করেনি। 

-কিসের কাগজ?

-সইম্পত্তির কাগজ৷ নিলয় বাজির দাদা যা বাজির নামে লিখে দিছে সেই সম্পত্তি৷ 

-অন্যরা কিছু বলেনি?

-কী যে বল না,অন্যদের কি এই সাহস আছে?সালামের বিপক্ষে কথা বলার৷ 

-বুঝলাম, নিলয় এই জন্য ই গ্রামে যাচ্ছে না,বাসায় যাচ্ছে না। 

-হ, বাজান৷ 

-আচ্ছা৷ এখন রাখি। 

আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম৷ সবার আগে নিলয়ের জন্য ভালো দেখে একটা ফোন কিনলাম। আমার নিলয় এই ফোনটা পেলে খুব খুশি হবে। তারপর ওর প্রিয় কিছু খাবার কিনে সোজা বাসায় চলে গেলাম৷ নিলয় কে আর ওর বাড়িতে পাঠাব না। আমার নিলয় আমার বাড়িতে থাকবে। আমার বুকের সাথে মিশে৷ এসব সম্পত্তি ওর লাগবে না৷ বলব লিখে দিয়ে দিতে। 


আমি গোসল সেরে হালকা কিছু খেয়ে শোফায় এসে বসলাম৷ গত কিছু দিন আগের একটা ঘটনা মনে হচ্ছিল বারবার৷ 

সেদিন দুপুরে কী মনে করে যেন হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে পড়েছিলাম। বাসায় এসে দেখি নিলয় তাদের বাসার ছাদে একটা ফুল গাছ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে৷ তাকে ব্যস্ত দেখে আমি আমাদের ছাদে উঠলাম৷ ছাদের এ মাথা থেকে ও মাথা কয়েকবার হাটার পরে ও তার দৃষ্টিতে পড়লাম না। শেষে বাধ্য হয়ে ই নাম ধরে ডাকলাম। 

-নিলয়,এই নিলয়৷ কী করছ। 

নিলয় মুচকি হেসে আনন্দিত গলায় বলল

-গাছ লাগাচ্ছি৷ 

-কী গাছ লাগাচ্ছ, শুনি

-কামিনী। 

-আমার কাছে আসো তো।আমি কামুক হয়ে আছি। 

কথাটা আমি খুব ধীরে বললাম। কিন্তু নিলয় শুনে ফেলল। সে হেসে হেসে বলল

-বাহ! ডাক্তার সাব, আপনি তো খুব অশ্লীল কথা জানেন। 

আমি লজ্জায় ঘুরে দাঁড়ালাম৷ 

মিনিটের মধ্যে নিলয় দৌড়ে ছাদে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো৷ ওর খালি ফর্সা শরীর,চিকন কোমড়,মুখের সদ্য গজানো দাড়ি,বুকের লোম আমার হৃদয় কাঁপিয়ে দিল৷ আমি ছাদে ই ওকে জড়িয়ে ধরতে যাব তখন সে দৌড়ে আমার রুমে চলে গেল৷ আমি আমার রুমে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কোমল ঠোটে চুমু খেলাম৷ ওর স্নিগ্ধ শরীর আমাকে মাতাল করে দিয়েছিল সেদিন ভরদুপুরে৷ভালবাসার মানুষের সাথে এমন মিলন এর পূর্বে আর কখনো হয়নি আমার৷ আমি প্রেমে উন্মাদের মত মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম৷


সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত। নিলয়ের খবর নেই৷ আমি জমিরউদ্দীন কাকাকে ওদের বাসায় পাঠিয়েছি এ নিয়ে দু'বার৷ সেখানে ও সে নেই৷ আমার বুকের ভেতর কেমন যেন করছিল৷ ঐদিকে রাত হতে না হতেই আকাশে কাল বৈশাখী ঝড়ের রেখা। বাতাস বয়তে লাগলো। আমার মনের ছটফটানি যেন আরো বেড়ে গেল৷ আমি দু'দন্ড বসতে পারছিলাম না। 

অস্থিরতায় রক্তচাপ বেড়ে গেল। আমি গাড়ি নিয়ে বের হলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে। জমিরুদ্দিন কাকা অনেক আটকানোর চেষ্টা করল৷ কিন্তু আমার মন মানে নি। আমার মন বলছিল নিলয়ের একটা অঘটন হয়েছে। 

আমি যখন গাড়ি নিয়ে বের হলাম তখন ঝড় আরো বেড়ে গেল। সারা,রাস্তা ফাঁকা৷ বৃষ্টির পাশাপাশি জোরালো বাতাস৷ সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না৷ হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে একটা, বড় গাছ ভেঙ্গে পড়লো। আমার গাড়ি গিয়ে ধাক্কা খেলো গাছের সাথে৷ আর আমি অনুভব করলাম আমার মাথায় চিনচিন ব্যথা। তারপর কিছু মনে নেই। 

...................(চলবে...........)

অমাবস্যার চাঁদ -৮ অমাবস্যার চাঁদ -৮ Reviewed by সমপ্রেমের গল্প on February 15, 2023 Rating: 5

2 comments:

  1. Vhaiya ei story ta Porte boshle shes na Kore uthte issa hoina . Tai ato deri na Kore kindly actu taratari post korle ki hoi..☹️
    But story ta onek valo hoise

    ReplyDelete
  2. ভাই প্লিজ স্টোরিটির আপডেট ১৫ দিন পর পর দেন প্লিজ প্লিজ প্লিজ🙏🏻

    ReplyDelete

Powered by Blogger.