Onlyfan Premium Videos

অমাবস্যার চাঁদ --৪

গল্পঃ- অমবস্যার চাঁদ 
পর্বঃ-০৪
লেখকঃ-আরভান শান আরাফ

ইমার্জেন্সি থেকে বের হতে হতে দুপুর হয়ে গেল।ডঃআসাদুজ্জামান স্যার আসতে একটু দেরি করে ফেলেছেন। আমার তাতে একটু ও বিরক্তবোধ হয়নি৷ বরং গতকাল রাতের পর থেকে মনটা খুব ফুরফুরে। আমি রুমে থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠার আগে দেখি একটা পাগলি দাঁড়িয়ে আছে পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে৷ সে সাত আট বছরের একটা ছেলের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে৷ বাচ্চাটা অনেক চেষ্টা করছে ছুটতে কিন্তু সে ব্যর্থ হচ্ছে৷ আমি গাড়িতে উঠতেই রাতের স্বপ্নটা চোখে ভেসে উঠল৷ স্বপ্নে দেখেছিলাম,আমাদের গ্রামে বিশাল এক উৎসব। আমি তখন ছোট৷ নিলয়ের বয়সের। স্বপ্নে মা জীবিত৷ আমি মায়ের হাত ধরে উৎসবে যাচ্ছি৷ পথে মধ্যে নিলয়ের সাথে দেখা৷ স্বপ্নে নিলয় আমার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। আমি মায়ের হাত ছাড়িয়ে নিলয়ের সাথে হাঁটছিলাম  খানিক যেতে, নিলয় বলল
-চল, দেখি কে আগে দৌড়ে মহিষের কাছে যেতে পারে। 
আমরা দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে নিলয় তৈমুর হয়ে গেল৷ আমি গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতেই মনটা আনন্দে ভরে যায়৷ 
স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার পরে ও তার আনন্দ টুকু রয়ে  গিয়েছিল। 
মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জীবনটা আরেকটু সুন্দর হতে পারত। এত এলোমেলো না হলে ভালো হত। সেদিন ছোটকা একগাদা মেয়ের ছবি নিয়ে এসে বলল
- নে বাপ। এইগুলা থেকে একটা পছন্দ হয় কিনা দেখ। তর বড় কাকা দিয়ে পাঠালো। এবার বিয়ে করতেই হবে। 
আমি কোনমতে ছোটকাকে বুঝিয়ে বিদেয় করেছি৷ কিন্তু বড় কাকার সামনে আমি দাঁড়াতে পারব না। দাদার মত ওনাকে ও আমার যমের মত ভয় হয়। ছোটকা প্রায় বলেন,
-তুই বিয়ে না করলে কীভাবে হবে?তুই আমাদের বংশের একমাত্র পোলা। তর বড় কাকার দুই মেয়ে। তার ও কোন ছেলেপুলে নেই৷ কদমশেখের বংশ যে নির্বংশ হয়ে যাবে বাপ। 
আমি কিছু বলি না। ভাবি৷ ভাবনার অন্ত খোঁজে পায় না৷ তবু ও ভাবতে হয়৷ 
আমি তখন খুব ছোট যখন আমার বাবা বাড়ি ছেড়ে পালান। বাবার চেহারাটা ও ঐভাবে মনে নেই৷ বাবা নাকি আমার মায়ের জন্য খুব পাগল ছিলেন। মাকে বিয়ে করার জন্য নানা বাড়ির উঠুনে গিয়ে খাটিয়া টাঙ্গিয়ে শুয়ে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র মাকে বিয়ে করার জন্য৷ 
জমিদার বাড়ির মেয়ে ছিলেন আমার মা। আমার নানা আর দাদার মধ্যে সারা জীবন ঝামেলা লেগে ই থাকত। বাবার জিদ সেই শত্রুতাকে আত্মীয়ে পরিণত করেন৷ সেই বাবা একদিন মাকে ছেড়ে দেশান্তরি হয়ে গেলেন? সময়ের সাথে কি ভালবাসা কমে?
আজ সারাদিন নিলয়কে দেখিনি। ওর তো কলেজ ও নেই। সারাদিন বাড়ি থাকার ছেলে সে নয়। তাহলে কোথায় গেল আজ নিলয়? জমিরউদ্দীন কে পাঠাব একবার?না থাক৷ কে কী ভাববে। 
সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে, আমি তখন চেম্বারে রোগী দেখছিলাম। আমার এসিস্ট্যান্ট মুস্তাক এসে বলল
-স্যার,নিলয় এসেছে। 
আমার বুকটা কেমন করে উঠল। আমি নিজেকে সামলে বললাম
-কেন এসেছে জিজ্ঞেস করুনি?শরীর খারাপ কিনা? 
-নাহ স্যার। ও তো রোজ ই আসে। আমাদের সাথে কথা বলে চলে যায়৷ আজ নাকি আপনার সাথে কী বলবে। 
-রোগী আর আছে? 
-নাহ৷ 
-আসতে বল ওকে। 
খানিকবাদে নিলয় ঢুকলো। ওর হাতে খাবার বক্স। সেটা রাখতে রাখতে বলল
-কাকী দিল আপনাকে। 
আমি মুচকি হেসে বললাম
-কাকী প্রায় এটা ওটা দিয়ে পাঠাচ্ছে কেন, বলতো? 
-তা তো জানি নে ডাক্তার সাহেব। কাকীর হয়তো আপনাকে খুব পছন্দ। 
আমি বক্সটা খোলতেই খিদে পেয়ে গেল৷
-এটা হালুয়া, তাই না?
-জ্বি। সুজির হালুয়া।খান নি আগে?
-ছোট সময় দাদীর হাতে হয়ত খেয়েছি। স্বাদ ভুলে গেছি। 
নিলয় খুব সুন্দর করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷ আমি বললাম
-কী হলো? এভাবে তাকিয়ে আছ যে। 
-আপনাকে দেখছি। 
ওর কথা শুনে কেন যে লজ্জা পেলাম৷ 
-আমাকে দেখার কী আছে? 
-কিছু নেই। তবু দেখতে ভাল লাগে। মনে হয়, দেখতেই থাকি, দেখতেই থাকি। 
ওর এমন প্রাণখোলা স্বীকারোক্তিতে আমার মন ভরে গেল। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আমার মন আনন্দে নেচে উঠল। নিজেকে সামলে পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম
-আজ সারাদিন কোথায় ছিলে?
-গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। 
-গগনপুর? 
-জ্বি। কৌশিকদার সাথে ঘুরলাম। মাছ ধরলাম৷
-তা কৌশিকদা কে? বন্ধু? 
-জ্বি না, বন্ধু না৷ ভাইয়ার বন্ধু৷ আমি তো দাদা ডাকি। 
আমার মন খারাপ হয়ে গেল৷ সারাদিন ভাইয়ের বন্ধুর সাথে থাকবে কেন? আমার কাছে কেন আসবে না? কেন যে রেগে গেলাম।প্রায় রাগি কন্ঠ ই বললাম
-এবার যাও ত। আমি ওয়ার্ডে যাব। 
আমার রাগি চেহারা দেখে নিলয় হয়ত মন খারাপ ই করল৷ সে কিছু না বলে বের হয়ে গেল৷ বের হওয়ার আগে আমার সামনে থেকে হালুয়ার বক্সটা নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারল। 
একি আপদ! এ ছেলের দেখি আমার চেয়ে ও অধিক রাগ। 
রাতে বাড়ি ফেরার পথে ছোট ছোট কয়েকটা ছেলে-মেয়েকে দেখলাম ফুল বিক্রি করছে৷ আমি তাদের কাছ থেকে এক তোড়া টকটকে লাল গোলাপ কিনে নিলাম। বাসায় ফিরে সেগুলো জমিরউদ্দীনকে দিয়ে বললাম
-নিলয়ে কে দিয়ে আসো। বলবে, আমি দিয়েছি। 
জমিরউদ্দীন ফুল দিয়ে ফিরে আসার মিনিট পাঁচেক পর নিলয় ঢুকল। ওর হাতে খাবার প্লেট।আমি তখন কাপড় খোলছিলাম। খালি শরীর। হুট করে সে যখন আমার রুমে ঢুকল তখন আমি কোমড়ে তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুমে ঢুকার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। নিলয় আকস্মিক ঢুকে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে চেঁচাতে লাগলো
-একি! আপনি কাপড় ছাড়া আছেন সেটা বলবেন না?
আমি মৃদ হেসে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম
-কেন,খালি শরীরে কাউকে কখনো দেখুনি?
নিলয় চোখ বন্ধ করে ই বলল
-দেখেছি৷ কিন্তু আপনাকে দেখিনি।
-তাহলে এবার দেখে নাও। 
নিলয় চোখ খোলে আমার দিকে তাকাল। আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে৷ 
ঝন করে একটা শব্দ হলো। নিলয় ঘরে ছেড়ে পালাল। আর ওর হাতের প্লেট ফ্লোরে পরে শব্দ করে ভেঙ্গে গেল। 
আমি হাসতে হাসতে গোসল দিতে ঢুকলাম।
গোসল থেকে বের হয়ে খাবার টেবিলে বসতে নিলয় আবার আসল। এখনো ওর হাতে খাবার প্লেট৷ সেটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলল
-আম্মু পাঠালো। 
আমি প্লেটের ঢাকনা উঠিয়ে দেখি কয়েক প্রকার মিষ্টি। 
-মিষ্টি? 
-জ্বি। আম্মু বানালো। আমাদের গরুর দুধে। 
-তোমাদের গরু আছে?
-আছে ত। গগনপুর তো আমাদের খামার আছে। 
আমি একটু মুখে দিতেই নিলয় চেচিয়ে উঠল
-আহা! করেন কি, এটা এখন না। খাবার পরে মিষ্টি খেতে হয়, জানেন না বুঝি? 
আমি বাধ্য ছেলের মত মিষ্টি রেখে ভাত খেতে লাগলাম। 
নিলয় যেভাবে এসেছিল, ঠিক সেভাবে প্রস্থান করল। 
আমার দিন চলে যাচ্ছিল। অদ্ভুত এক ভাল লাগায়৷ কখনো কোন কিছু নিয়ে বিরক্ত হলে,পরিশ্রম করে ক্লান্ত হলে নিলয়ের চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করি৷ ওর শান্ত চোখ,মায়াময় মুখ আর প্রাণখোলা হাসিমাখা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলে সব যন্ত্রনা চলে যায়। আমি নিলয়ের প্রতি আসক্ত৷ খুব প্রবলভাবে। সারাক্ষণ ইচ্ছে করে ও আমার পাশে থাকুক,কাছে থাকুক৷ আমার সমগ্র অস্তিত্ব জড়িয়ে থাকুক। 
আমি বড় হয়েছি বিস্তর একাকিত্ব নিয়ে। যে একাকিত্ব আমাকে প্রায় যন্ত্রনা দিত৷ কিন্তু নিলয় আমার পাশে থাকলে মনে হয় আমার কোন যন্ত্রনা নেই। কষ্ট নেই। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। এক অন্য রকম ভাল লাগা। 
আমি আমার সেক্সুয়্যাল অরিয়েন্টেশন নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু, নিলয়?ও যদি স্ট্রেইট হয় তবে?আমার এই অনুভূতির কি কোন মূল্য থাকবে?আমার এই ভাল লাগার কোন ভবিষ্যৎ?
সকাল থেকে সেদিন বৃষ্টি৷ আমি সেদিন আর হাসপাতাল যাইনি৷ বারান্দায় বসে বসে বৃষ্টি দেখে সারা বেলা কাটানোর প্ল্যান করছিলাম৷ ঠিক সেই সময় নিলয় কাক ভেজা হয়ে রুমে ঢুকলো। ওকে দেখে আমার সারা শরীর ঝড় বয়ে গেল। 
রুমে ঢুকতেই এক গাল হেসে বলল
-ডাক্তার সাব, বাসায় একা একা বিরক্ত লাগছিল৷ তাই ভাবলাম যাই ডাক্তার সাবকে একটু জ্বালিয়ে আসি।
আমি চেয়ার থেকে উঠে ওর পাশে গিয়ে বললাম
-তা বিরক্তিকর  সময় কাটাতে কী করা যেতে পারে?
-চলুন,মুভি দেখি।
-টিভিতে কী কোন সিনেমা দেখাচ্ছে?
-নাহ, কিন্তু আমার কাছে ডিভিডি আছে। 
নিলয় আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমাকে ওর হাতের ডিভিডিটা দেখালো। 
সিনেমা শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিদ্যু চলে গেল। সাথে সাথে শুরু হলো প্রবল বর্ষণ। 
রুম অন্ধকার। হালকা আলোয় শুধু উপস্থিতি বুঝা যাচ্ছে৷ আমি সাত পাঁচ না ভেবে নিলয়ের হাতে হাত রাখলাম৷ ওর শীতল হাত আমার উষ্ণ শরীরকে শীতল করে দিল। 
নিলয় হাত সরালো না৷ আমি ভরসা পেয়ে আরো শক্ত করে হাতটা ধরলাম। নিলয় হঠাৎ হাত ছাড়িয়ে নিল।
-বিদ্যুৎ মনে হয় আসবে না। আমি তাহলে চলে যাই। 
আমি ওর হাতটা আবার ধরলাম। 
-না আসুক৷ তুমি থাকো কিছুক্ষণ। 
-কেন?
-তুমি থাকলে আমার ভাল লাগবে। 
নিলয় আমার বাহুতে হাত রাখল। ওর স্পর্শে আমি যেন মোমের মত গলে যাচ্ছিলাম৷ 
আর ঠিক তখন বিদ্যুৎ চলে আসল। দুজন ই লজ্জায় মুখ দু'দিকে ফিরিয়ে নিলাম। 
সাথে সাথে জমিরউদ্দীন ঢুকলো আর নিলয় এক প্রকার দৌড়ে ই বের হয়ে গেল। 
আমি তখন উদ্ভ্রান্তের মত তাকিয়ে ছিলাম, মনিটরের দিকে। 
সেদিন রাতে আমার এক ফোটা ঘুম হয়নি। সারা রাত্র ছটফট করেছি৷ ইতোপূর্বে কাউকে কাছে পাওয়ার যন্ত্রনা আমাকে এভাবে কাতর কারেনি। কাউকে আমার বাহুতে নেওয়ার জন্য মন এমন আকুল হয়নি৷ সারা রাত্রি নিলয়ের কথা ভেবেছি৷ ওর শীতল শরীর ব্যতিত আমার এই উষ্ণতা কমানোর সাধ্য কারো নেই। ওর স্পর্শ ছাড়া আমার ছটফটানো কমবে ও না৷ 
শেষ রাত্রের দিকে৷ তখনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি।কলিং বেলের শব্দে জমিরউদ্দীন গিয়ে দরজা খোলল। এত রাতে কে আসলো দেখার জন্য আমি রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। 
.......(চলবে)......



 

অমাবস্যার চাঁদ --৪ অমাবস্যার চাঁদ --৪ Reviewed by সমপ্রেমের গল্প on September 06, 2022 Rating: 5

2 comments:

Powered by Blogger.